রবিবার, ২৪ অগাস্ট ২০২৫, ০২:৪৪ অপরাহ্ন
রানীশংকৈল (ঠাকুরগাঁও) প্রতিনিধি:: ঠাকুরগাঁওয়ে রাণীশংকৈলে সরকারী আশ্রয়ণ প্রকল্পে ঘর পাওয়ার আশায় দিন গুণছেন বৃদ্ধ আক্তার হোসেন ও শহিরন নেছা দম্পতি। এ দুয়ার ও দুয়ার ঘুরে মানুষের সাহায্যে নিয়েই জীবিকা নির্বাহ করেন বৃদ্ধ দম্পতি আক্তার হোসেন (৭৫) ও শহিরন নেছা (৫৫)। মাথা গোঁজার ঠাঁই বলতে স্থানীয় এক ব্যক্তির পুকুর পাড়ের ঘর। সেখানেই ৩ শতক জমির ওপর ঘর বানিয়ে থাকেন ছেলে, নাতি-পুতিসহ ৮ জন। সম্প্রতি ঠাকুরগাঁওয়ে রানীশংকৈল প্রেসক্লাবে এসে সরকারি আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরের আশায় সাংবাদিকদের কাছে আকুতি জানান তাঁরা।
উপজেলার রাতোর ইউনিয়নের ভেলাই মালিভিটা গ্রামের বাসিন্দারা জানিয়েছেন, আক্তার হোসেন বর্তমানে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী, তাঁর স্ত্রী শহিরন নেছা তাঁকে নিয়ে মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়ান। তাঁদের এক ছেলে ও এক মেয়ে। মেয়ের বিয়ে দেওয়া হয়েছে। আক্তার হোসেনের ছেলে পেশায় দিনমজুর। তাঁর পরিবারেও রয়েছে স্ত্রী ও ৪ সন্তানসহ মোট ৬ জন। সব মিলিয়ে দুই পরিবারে রয়েছেন ৮ জন।
সম্প্রতি রানীশংকৈল প্রেসক্লাবের বারান্দায় বসেছিলেন এই দম্পতি। এ সময় এ প্রতিবেদকের নজরে পড়েন তাঁরা। কাউকে খুঁজছেন কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তাঁরা বলেন, ‘বাবা হামরা সাংবাদিক খুজিচ্চি। প্রতিবেদক নিজের পরিচয় দিলে হাউমাউ করে কেঁদে ওঠেন তাঁরা। বৃদ্ধ আক্তার হোসেন বলেন, ‘বাবা জীবনে এক শতক জমিও কিনবার পারি নাই। মকবুল মেম্বারের জমিত থাকি কাজ কাম করি জীবন চলাইছি। সংসার জীবনে এক ছেলে এক মেয়ে হয়াছে হামার। ওমাক বিয়া দিছি। এখন ছেলের ঘরে আবার ২টি পোতা (নাতি) ২টি পুঁতি (নাতি) হয়েছে।
বৃদ্ধ আরও বলেন, ‘এখন থেকি ১০ বছর আগোত এক অসুখে মোর চোকগুলা নষ্ট হয় গিছে। এলা দেখবার না পারো। মুই আর মোর বউ মিলে মানুষের দোরে দোরে ঘুরি সাহায্যে তুলি চলছু মোর এক ছোইল ওর নাম এরশাদ সে মাইনসের বাড়িত জন দিয়া চারটা ছোল (২ ছেলে, ২ মেয়ে) পুইষছে। ওর কামাই দিয়া ওই চলে। মোর কামাই দিয়া মুই।
আক্তার হোসেন আক্ষেপ করে বলেন, ‘হামার ওঠেনা শাল বাগানের পাশত ঘর হইল। একটা ঘরের তুনে মোর ছইল এরশাদ গেছিলো। কেউ কতা শুনেনি। ওঠে যারা নাম লিখি নিছে তাঁরা ঘর হবে বলি ঘর দেয় নাই। এলা ভিন এলাকার লোক ওঠে না ঘর পাইছে বলে শুনিছু। মুই অন্ধ মানুষ জায়গা জমি নাই। সরকার এত ঘর দিছে মুই কি একটা ঘর পাওয়ার অধিকার রাখো না। মোর টাকা পয়সা নাই দেখি কি মুই ঘর পাইম না। মোর একটাই আকুতি যেন মুই একটা ঘর পাও। মোর ছইলডাও যেন পায়।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় তিনটি ধাপে মোট আশ্রয়ণের বাড়ি নির্মাণ করা হয়েছে ১ হাজার ৪০৯টি বাড়ি।
রাতোর ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মকবুল হোসেন বলেন, ‘তাঁরা দীর্ঘদিন ধরে আমাদের পুকুর পাড়ে বসবাস করছে। তাঁরা অবশ্যই আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর পাওয়ার যোগ্য। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ভূমি অফিসের লোকেরাই তালিকা প্রণয়ন করছে। এখানে আমাদের কোনো সুপারিশ চলে না। তাঁরা যাদের মনে করছে তাদেরই ঘর দিচ্ছে।